প্রিয় নবী (সা.)-এর কিছু অমূল্য উপদেশ
প্রিয় নবী (সা.) সর্বদা উম্মতের কল্যাণ চাইতেন। তাই তিনি তাঁর উম্মতকে সব সময় এমন বিষয়ে নসিহত করতেন, যা তাদের ইহকাল ও পরকালের জন্য কল্যাণকর হবে। যার মাধ্যমে তার উভয় জাহানের সফলতা অর্জন করবে। যার মাধ্যমে উম্মত নিজেদের ইহকাল ও পরকালকে সুখময় করে তুলতে পারবে। নিম্নে এ ধরনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নসিহত তুলে ধরা হলো—

 

তাওবা : তাওবা মানুষকে পাপমুক্ত করে। জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেয়। আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দেয়। গুনাহের কারণে মানুষের জীবন থেকে উঠে যাওয়া বরকত তাওবার মাধ্যমে ফিরে আসে। এ কারণে রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতকে বেশি বেশি তাওবার পরামর্শ দিতেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে লোক পশ্চিম আকাশে সূর্যোদয় হওয়ার আগে তাওবা করবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৫৪)

জ্ঞানার্জন : মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আর ইবাদতের জন্য প্রয়োজন সঠিক জ্ঞানের। জ্ঞানশূন্য মানুষের জন্য পৃথিবীটা কঠিন। জ্ঞান ছাড়া দুনিয়া-আখিরাত কোনো কিছু সাজানো উচিত নয়। রাসুল (সা.) দ্বিনি জ্ঞান (ইলম) অর্জনের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেশনে কোনো পথে চলবে, তার জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৪৬)

বেশি পরিমাণে জিকির : আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কি তোমাদের আমলগুলোর সর্বোত্তমটি সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করব না, যা তোমাদের প্রভুর কাছে সর্বাধিক প্রিয়, তোমাদের মর্যাদা বেশি উন্নীতকারী, তোমাদের সোনা-রুপা দান করার চেয়ে এবং যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে তোমাদের শত্রুদের হত্যা করা এবং তোমাদের নিহত হওয়ার চেয়ে উত্তম? সাহাবিরা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সেটি কী? তিনি বলেন, আল্লাহর জিকির। মুআজ বিন জাবাল (রা.) বলেন, কোনো মানুষের জন্য আল্লাহর জিকিরের চেয়ে উত্তম আমল নাই, যা তাকে মহামহিম আল্লাহর শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পারে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭৯০)

ভালো কাজ করা : রাসুল (সা.) তাঁর উম্মতদের ভালো কাজে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে বেশি বেশি পুণ্য অর্জনের উৎসাহ দিতেন। এর মাধ্যমে একটি সমাজ যেমন সুন্দর হয়, তেমনি ব্যক্তিও সোনার মানুষে পরিণত হয়। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, প্রতিটি পুণ্যই দান-খয়রাতস্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাৎ এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে একটু পানি ঢেলে দেওয়াও সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৩০৪)

ঈমানের দাওয়াত দেওয়া : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৯)

কোরআন পাঠ : আবু উসামাহ আল বাহিলী (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কিয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সে সুপারিশকারী হিসেবে আসবে। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৫৯)

সালামের প্রচার প্রসার : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কসম সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না মুমিন হও। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন বিষয় অবহিত করব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৩)

মানুষকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া প্রদান করব। আজ এমন দিন, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া নেই। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৪২)

রোগীর খোঁজ নেওয়া : আলী (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, কোনো মুসলমান যদি অন্য কোনো মুসলিম রোগীকে সকাল বেলা দেখতে যায় তাহলে ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখতে যায় তবে ৭০ হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরি হয়। (মুসলিম, হাদিস : ৯৬৯)

অন্যের দোষ গোপন রাখা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, কোনো বান্দা যদি অন্য কোনো লোকের ত্রুটি-বিচ্যুতি দুনিয়াতে আড়াল করে রাখে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার ত্রুটি-বিচ্যুতি আড়াল করে রাখবেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮৯)

সততা : আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, …তোমরা অবশ্যই সততা অবলম্বন করবে। কেননা সততা নেক কাজের দিকে পথ দেখায় এবং নেক কাজ জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়।

আর কোনো ব্যক্তি সর্বদা সততা বজায় রাখলে এবং সততাকে নিজের স্বভাবে পরিণত করলে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তার নাম পরম সত্যবাদী হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৮৯)

মা-বাবার সেবা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তার নাক ভূলুণ্ঠিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লিখিত হলো, কিন্তু সে আমার ওপর দরুদ পাঠ করেনি। ভূলুণ্ঠিত হোক তার নাক, যার কাছে রমজান মাস এলো অথচ তার গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার আগেই তা পার হয়ে গেল। আর ভূলুণ্ঠিত হোক তার নাক, যার কাছে তার মা-বাবা বৃদ্ধে উপনীত হলো; কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করায়নি (সে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে জান্নাত অর্জন করেনি)। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫

ডেকক/এনপ্র